উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কলকাতায় বিশেষভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল কালীঘাট পটচিত্র। কালীঘাট মন্দিরের পাশে পটুয়ারা পসার জমাতেন এবং খুব অল্প পয়সায় এই ছবিগুলি সংগ্রহ করতেন দর্শনার্থীরা। এমনকি বিভিন্ন আর্ট স্টুডিও-তে প্রস্তুত পৌরাণিক কাহিনির লিথোগ্রাফ এবং অন্যান্য ছবিও কলকাতার বাজারে বিক্রি হতে শুরু করেছিল। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কালীঘাট পট এবং লিথোগ্রাফের এই জনপ্রিয়তা অর্জন খোদাই ছবির কারিগরদের আকৃষ্ট করেছিল। তাঁদেরও হয়তো মনে হয়েছিল বড় আকারের খোদাই চিত্র তৈরি করা যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রদর্শশালায় এবং সংগ্রাহকদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে বড় আকারের লিথোগ্রাফের অনেক নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বড় খোদাই চিত্র সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। মূল লেখায় এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। তবু প্রশ্ন জাগে তৎকালীন শিল্পীরা নিজের উদ্যোগে বড় বড় কাঠ-খোদাই-এর ছবি কেন তৈরি করতেন? শুধুই কি বাজার ধরার জন্য; নাকি এই ধরনের কাজের জন্য বরাত পাওয়া যেত আলাদা করে? প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এই শিল্পীরা গ্রন্থ-চিত্রনের জন্য বায়না নিতেন; এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁদেরকে ছবি প্রস্তুত করে ছাপাখানায় বা প্রকাশকের কাছে পাঠাতে হত। যথেষ্ট ব্যস্ততার মধ্যেও গ্রন্থ-চিত্রনের কাজের বাইরে গিয়ে তাঁরা যে এই ছবিগুলি তৈরি করেছিলেন—তা ঠিক কেন? ছবি বিক্রির জন্য দোকানের প্রয়োজন। নিজস্ব দোকানঘর কি তাঁদের আদৌ ছিল? কোনো কোনো শিল্পী ছবিতে স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বাসস্থানেরও উল্লেখ করতেন; এবং তা যে শুধুই কলকাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল এমন নয়। অথচ সেই যুগে গ্রামগঞ্জে বড় বড় কাঠ-খোদাই-ছবির দোকান ছিল—এমন অনুমান ঐতিহাসিকভাবে খুব একটা সম্মত হবে না বলেই মনে হয়। আবার যেহেতু বিদেশি মিউজিয়াম এবং সেই সময়কার বিদেশি শিল্পী ও সংগ্রাহকদের কাছে এই ধরনের বহু কাঠ-খোদাই অ্যালবাম পাওয়া গেছে—তা থেকে ধারণা করাই যায় যে এই ধরনের অধিকাংশ ছবির ক্রেতাই ছিলেন সাহেবসুবোরা। হয়তো সাহেবরাই এই ধরনের কাজের বরাত দিতেন।
Khodaichitrakosh-Unish Shatoker Banglar Granthachitran [Joytirmoy Bhattacharya]
Original price was: ₹1,800.₹1,350Current price is: ₹1,350.
কলকাতা (তৎকালীন কলিকাতা) ব্রিটিশ শাসিত ভারতের রাজধানী—যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দু; প্রশাসনিক কার্যকলাপ, শিক্ষা ও শিল্পের পীঠস্থান। কেবল ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ কাজের সুবাদে এই শহরে আসতে শুরু করল। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও এই শহরে তাদের পসার জমাতে শুরু করলেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই কলকাতা শহরের বুকে প্রকাশক ও ছাপাখানার সংখ্যা বাড়তে থাকল। প্রয়োজন হল দক্ষ কারিগর। একদিকে শিল্প বিদ্যালয়ে দলে দলে ছাত্রদের যোগদান এবং অন্যদিকে কাজের সুযোগ—কলকাতার চেহারা বদলাতে শুরু করল। আর তার পরিণতি হিসেবে আমরা পেলাম সে-যুগের সচিত্র বইয়ের সম্ভার। কেবল বই নয়, উনিশ শতকের শুরুতে বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র টেক্সটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল; ছাপাখানার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞাপনেও খোদাই চিত্রের ব্যবহার শুরু হল। ক্রমশ বিজ্ঞাপনের অঙ্গ হিসেবে পাওয়া গেল অপূর্ব সব খোদাই চিত্র। সেসব বিজ্ঞাপনের ছবি আজও বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ব্যবহার করতে দেখা যায়।
Please login during checkout to avail loyalty points. Guest checkouts are not eligible to avail loyalty points. We will notify if any of your ordered book is out of print or price revised due to reprint or new edition.
Reviews
There are no reviews yet.