বই-ব্লগ। বাংলা বইয়ের দৈনিক ব্লগ। এই প্রয়াসে আমরা আপনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি বাংলা বই ও পত্র-পত্রিকার খবর। নতুন ও সদ্য প্রকাশিত বই, পত্র-পত্রিকার খবরের পাশাপাশি থাকে আমাদের টিমের বাছাই করা কিছু বইয়ের খবর। আশা করি আপনার মত বইপ্রেমী মানুষের কাছে আমাদের এই প্রয়াস ভালোই লাগবে।
বইগুলির বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তো এই ব্লগে থাকছেই, বইগুলি সম্পর্কে আরও বিশদে জানতে ( যেমন দাম ) ও অর্ডার করতে বইয়ের প্রচ্ছদে ক্লিক করুন। ওয়েবসাইটে আরও সমস্ত তথ্য বিশদে দেওয়া আছে। এছাড়া আর যেকোন জিজ্ঞাস্য থাকলে আমাদের সরাসরি Whatsapp করুন 7980991691 নম্বরে।
ফ্যানি হিল-এক বারাঙ্গনার বারোমাস্যা । অনুবাদ – সুপর্ণা চ্যাটার্জি ঘোষাল
বহু বিতর্কিত এবং একদা নিষিদ্ধ এই উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ।
‘ইরোটিক’ শব্দবন্ধটা কানে এলেই বেশ কিছু মানুষ ভ্রূ কুঞ্চিত করে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নেন। অনেকেই চাপা স্বরে প্রসঙ্গ বদলানোর চেষ্টা করেন। কেউ কেউ আবার বিশদ আলোচনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। চায়ের ঠেকে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ওঠে তুমুল বিতর্ক। কিন্তু যৌনতা, যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, অপরিহার্যও বটে; তাকে বাদ দিয়ে সাহিত্য হয় কীভাবে?
জন ক্লিল্যান্ডের লেখা ‘ফ্যানি হিল’ (১৭৪৯) তেমনই এক বিতর্কিত ও বহুচর্চিত ‘ইরোটিক নভেল’। সম্ভবত, সাহিত্যের দুনিয়ায় নিষিদ্ধ হওয়া বইগুলোর মধ্যে অন্যতমও বটে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং সাহিত্যরসিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ‘ফ্যানি হিল আজও নন্দিত এবং নিন্দিত।’
মস্কো বনাম পন্ডিচেরী ।। শিবরাম চক্রবর্তী
শিবরাম চক্রবর্তীর ভাষায় ” মস্কো বনাম পন্ডিচেরী ” হচ্ছে , মস্কো নিয়ে পন্ডিতি , আর পন্ডিচেরী নিয়ে মস্কোরা ।
শিবরাম এই প্রবন্ধ গুলো কেন লিখেছিলেন ? তার কথাতেই – “এই লেখাগুলি যখনকার , তখন কমুনিজমের নামগন্ধও এদেশে ছিল না, ( কিছু নাম গন্ধই খালি ছিল );মার্কসীয় সাহিত্যের আমদানি হয়নি । এই নামমাত্র কমুনিজম সম্বল করে, ঐ তন্ত্রে ওয়াকিবহাল না হয়েও যে আমি কলম ধরতে পেরেছিলাম তার কারণ সাম্যবাদ আসলে এ দেশেরই চারা – বিদেশের কলম নয় ।”
বইতে মোট ১১ খানা প্রবন্ধ রয়েছে । বেশির ভাগ প্রবন্ধই সেই সময়কার বিদগদ্ধ পন্ডিত যেমন নলিনী গুপ্ত , দিলীপকুমার রায় , শচীন সেন প্রমুখের সাথে তার তর্ক । প্রবন্ধ গুলোর ছত্রে ছত্রে যুক্তির প্রতি তাঁর নিষ্ঠা প্রকাশ পায়। বর্তমান সমাজে যুক্তিকে বাতিল করে ভাব, কল্পনা আর ভক্তিকে অবলম্বন করে যে অযুক্তিকে প্রধান বলে উপস্থাপনের চেষ্টা চলছে, এই বইটি সেই অযুক্তিকে বাতিল করে পাঠক দের যুক্তির স্তম্ভের উপর দাঁড় করায়।
পুরো বইটি আলোকিত হয়ে আছে লেখক শিবরাম চক্রবর্তীর যুক্তিবাদী মননে। এই বইয়ের পাঠ অত্যন্ত জরুরি এই সময়ের নিরিখে। পূর্ণেন্দু পত্রীর প্রচ্ছদে হাসির রাজার এই বইটি সত্যিই বিস্ময় জাগানিয়া।
কলকাত্তার গয়না কথা । হরিপদ ভৌমিক
সোনার বাংলায় সোনার অলংকার নির্মাণ শিল্পের যোগসূত্র বহু প্রাচীন। অনেকে মনে করেন, ‘বঙ্গ’ বা ‘বাঙ্গালি’ এই দুটি নামের উৎস্য-মধ্যে সোনার ছোঁয়া রয়েছে।
সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায় ‘অলংকার: লোকপ্রযুক্তি’ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘তেলেগু ভাষায় ‘বাঙ্গালা শব্দের অর্থ হল সোনা’ বাঙ্গালোর (ব্যাঙ্গালুরু) শব্দটির অর্থ ‘সোনার শহর’।
প্রাচীন বাংলায় যে সোনার গয়নার বহুল ব্যবহার ছিল, সেই তথ্য নানাভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পরিব্রাজক হিউ এন সাঙ বাংলার নারীদের ব্যবহৃত অলংকারের কথায় লিখে ছেন-‘তাদের কানে ছিল মূল্যবান পাথর খচিত সোনার দুল, গলায় ছিল বোঝান অলংকারসহ হার, হাতে ও পায়ে ছিল সোনার কঙ্কন ও মল।
‘সপ্তদশ শতকে ফরাসি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ সময়ে মেয়েদের অলংকার দেখে অবাক হয়ে বলেছিলেন-‘সাম্রাজ্য যেন সোনা-রূপোর খনি যা বার বার গলিয়ে মেয়েদের নানা অলংকার তৈরি হতো, এবং হয় তা অবিশ্বাস্য।’
আন্তর্জাতিক স্বর্ণ-বাণিজ্যে বাংলা ঘরনার স্বর্ণালঙ্কার এক বিশেষ উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে রেখেছে।
বিত্তসাধনা । রূপক সাহা
দত্ত জুয়েলার্সের পারিবারিক নিয়ম, ব্যবসায় অংশীদার হতে গেলে একমাসের একটা কৃষ্ণসাধন পর্বের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। অভিজিৎকে বলে দেওয়া হয়েছিল, বাড়িতে থাকা চলবে না। বাইরে কোথাও অজ্ঞাতবাসে প্রথম তিন সপ্তাহে তিনটে আলাদা জায়গায় চাকরি করতে হবে। শেষ সপ্তাহে কোনও ব্যবসা করে কমপক্ষে দশ হাজার টাকা রোজগার করে আনতে হবে। নিজের আসল পরিচয় কোথাও ফাঁস হয়ে গেলে, ফের কৃচ্ছসাধন পর্ব নতুন ভাবে শুরু করতে হবে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে অভিজিৎ পোস্তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। একমাস ধরে শর্ত পূরণ করার পর বুঝতে পারে, জীবিকা নির্বাহ করার জন্য মানুষকে কতটা কষ্ট করতে হয়। অভিজ্ঞতা ওকে শেখায়, টাকার মূল্যই বা কতটা?
ম্যাজিক হলেও সত্যি । দীপারুণ ভট্টাচার্য
সত্যজিৎ রায় লিখেছেন, ‘…কামুর বিচিত্র কীর্তিকলাপের কথা লিখতে গেলে একটা পুরো বই হয়ে যায়’। কাজেই এটাই কামাখ্যা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ওরফে কামুকে নিয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তেমন কোনো বই এর আগে কেউ লেখেননি। লেখা প্রথম বই। কামুর জীবন নির্ভর এই উপন্যাসের প্রতিটি পর্বে রয়েছে তাঁর বিচিত্র কীর্তিকলাপ, হিউমার, স্যাটায়ার এবং পানিং-এর গল্প। যা তাঁর জীবন এবং অভিনয় দক্ষতার দলিলসম। এই লেখা পড়তে পড়তে পাঠক বুঝতে পারবেন অল্প কিছু সিনেমার পার্শ্ব-চরিত্রে অভিনয় করেও কেন কামু আপামর বাঙালি মনে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছেন। মানুষ কামু মুখার্জিকে এই বই সকল পাঠকের হাদয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে দেবে।
লাদাখের রহস্যময় গুম্ফা । হোমাগ্নি ঘোষ
লাদাখকে বলে হারানো সাম্রাজ্যের গুপ্তধন। সেই গুপ্তধনের সন্ধানে সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ছুটে আসে অনাবিল আনন্দ ও অনন্য তাভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে। লাদাখের অসাধারণ ভূ-প্রকৃতি, সেখানকার মানুষজন, সংস্কৃতি, তাদের ভাষা, তাদের দেবদেবী, ধর্মীয় আচার-আচরণ, স্থাপত্য মুগ্ধতার আবেশে ডুবিয়ে দেয়। রয়েছে অসংখ্য অজানা কাহিনী, রূপকথা, অলৌকিক গল্পগুজবে মেশানো রহস্যময় বৌদ্ধ গুম্ফা।