Author | |
---|---|
No. of Pages. | 124 |
Publisher | Dhansere |
-10%
Cherrybasanta
₹315.00
Please login during checkout to avail loyalty points. Guest checkouts are not eligible to avail loyalty points.
Out of Print or Stock
We will notify if any of your ordered book is out of print or price revised due to reprint or new edition.
Atanu (verified owner) –
কলকাতা বইমেলা হয়ে থাকে মাঘ মাসের মাঝামাঝি। শীত তখন স্লগ ওভারে খেলে। তাই কম্বল মুড়ি দিয়ে নতুন বইয়ের পাতা ওল্টানোর সুযোগ থাকে। এবার কম্বলটা একদিনের জন্যে বেরিয়ে আবার ঢুকে গেছে তার বাক্সয়। কিন্তু শীতের চটপট ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ায় ভাগ্য খুলে গেছে আরেকজনের, গ্রীস্মকালের তাড়াতাড়ি ক্রিজে নামার তাগিদে যে ব্যাট করার সুযোগই পায়না। মা-র বাগানের টবগুলোয় দেখছি ফুল ফুটছে, আমগাছে বউল এসে গেছে। একটা পরিচিত পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি থেকে থেকেই। তাই বইমেলা থেকে কেনা একব্যাগ বই থেকে এটাকেই হাতে নিলাম। আর মলাটটা খুলতেই চলে গেলাম এক স্বপ্নের দেশে।
এ তো বই নয়, একখানা আস্ত টাইম মেশিন। টাইম মেশিনের চড়ে কখনো চলে যাচ্ছি দশম শতকের জাপানে, যেখানে রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে বসে উপন্যাস লিখছেন সাম্রাজ্ঞীর এক সহচরী মুরাসাকি শিকিবু, যে উপন্যাস “টেল অফ গেনজি”কে অনেক পরে “পৃথিবীর প্রথম আধুনিক উপন্যাস”এর তকমা দেবেন পণ্ডিতরা। কখনো আবার যাচ্ছি উনিশ শতকের কোরিয়ায়। পাহাড়, অরণ্যের মাঝে প্রাচীনকালের চীনদেশীয় কবি লিন বু-র ছোট্ট কুটিরের ছবি এঁকেছেন কোরিয়ান শিল্পী। তলায় লেখা “আমি লিন বু-র বাড়ি যাচ্ছি”। এই ছবি এঁকেই তিনি চলে যেতে পারবেন লিন বু-র কাছে। সেখান থেকে চলে আসছি বিংশ শতাব্দীরর অভিশপ্ত হিরোশিমায়। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একটার পর একটা কাগজের সারস বানিয়ে চলেছে এগারো বছরের ফুটফুটে মেয়ে সাদাকো। পরমাণু বোমার আঘাত থেকে বেঁচে গেলেও তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ম্যালিগন্যান্ট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। তার কোন বন্ধু বলেছিল হাজারটা সারস বানাতে পারলে সে বেঁচে যাবে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে একুশ শতকের সিওলে এসে দেখলাম আকাশে রংবেরঙের ঘুড়ি উড়ছে। ঘুড়ির সুতোয় কিন্তু মাঞ্জা নেই। পাশের ঘুড়িগুলোকে কাটতে না শিখলে নিজে ওড়া যাবে না, সেটা বোধহয় এঁরা মানেন না। আবার তারপর ফিরে গেলাম কোন স্মরণাতীত কালে, কোরিয়ার এক শহরে। সেদেশের রাজা সমুদ্রের ধারে বসে প্রতীক্ষা করছেন ভারতবর্ষ থেকে পালতোলা জাহাজে সাগরপাড়ি দেওয়া এক সুন্দরী রাজকন্যার জন্য।
কোরিয়া আর জাপান এই দুই দেশের কয়েক শতাব্দীর সাহিত্য, শিল্প, ভাষা, দর্শন, খাদ্য, প্রকৃতি সবকিছুরই টুকরো টুকরো দৃশ্য এলোমেলোভাবে ফুটে উঠল টাইম মেশিনের পর্দায়। সে দৃশ্য যেমন লেখা হয়েছে শিজো কবিতা, ইতিহাস, উপকথা আর ট্রাভেলগের মিশেলে তৈরী আশ্চর্য গদ্যে তেমনি আঁকা হয়েছে অজস্র সাদাকালো আর রঙিণ ছবিতে। জাপান আর কোরিয়া – এই দুই দেশ যেমন জড়িয়ে আছে সংস্কৃতির নৈকট্যে, তেমনি ধরে রেখেছে সংঘাতের তিক্ত ইতিহাসকেও। বইয়ের নাম “চেরিফুলে”র নামে। জাপানে জাতীয়তাবাদের প্রতীক এই চেরি ফুল কোরিয়ায় হয়ে যায় জাপানি সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রতিভূ। আর এই দুই দেশের আত্মাকে বেঁধে রেখেছে আরো একটা দেশ, যে দেশ “স্বপ্ন দিয়ে তৈরী, স্মৃতি দিয়ে ঘেরা”, কোন ভূগোল বইয়ের ম্যাপ যে দেশকে বেঁধে রাখতে পারেনি। সেই দেশের এক গৃহত্যাগী রাজকুমারের বার্তা একদিন পৌঁছে গিয়েছিল জাপান, কোরিয়া, চীন আরো কত দেশে। সেইসব দেশের পাহাড়ের চূড়ায়, গুহার তলায়, মন্দিরের অন্দরে হাজার বছর ধরে প্রার্থনার সুর বেজে চলেছে সেই রাজকুমারের বাণীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে।
বইটা বন্ধ করে জানলার দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম তাকে সেই পাখিটাকে। বসন্তের দূত। একা একাই গাছের ডালে ঘুরে ঘুরে শিষ দিয়ে গান গেয়ে চলেছে। বসন্ত এসে গেছে।